এস.কে কামরুল হাসান, সাতক্ষীরা ঃ জ্যেষ্ট আইনজীবীদের সিদ্ধান্তের রেজুলেশনে প্রার্থীদের বয়সসীমা নির্ধারণ না থাকলেও নির্বাচন কমিশনার তা না মানা ও আইনজীবী সমিতির সভাপতির একক সিদ্ধান্তে নির্বাচন কমিশন গঠণ করার ঘটনায় আগামি ১৬ মার্চ নির্বাচন স্থগিত চেয়ে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাড. নুরুল আমিন বাদি হয়ে গত মঙ্গলবার সাতক্ষীরা সদর সহকারি জজ আদালতে মঙ্গলবার এ মামলা দায়ের করেন। বুধবার শুনানী শেষে বিচারক এম এ সাঈদ বিবাদীদের আগামি পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে কারণ দর্শাণোর নির্দেশ দিয়েছেন। সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতি সূত্রে জানা গেছে,১৮৭২ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতিতে যে সমস্ত গঠণতন্ত্র রচিত হয়েছে তাতে সমিতির যে কোন পদে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক কোন প্রার্থীর বয়স সীমা নির্ধারিত ছিল না। ২০১৩ সালে অ্যাড. শাহ আলম সভাপতি হওয়ার পর সভাপতি পদের জন্য প্রাক্টিসের মেয়াদ ২৫, সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য ২০, সাধারন সদস্য পদের জন্য তিন বছর ও ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির বাকি ছয়টি পদের জন্য ১০ বছর করে প্রাক্টিসের মেয়াদ নির্ধারণ করে দেন। ২০১৬ সালে অ্যাড. আব্দুল মজিদ (২) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর সভাপতি পদে প্রাক্টিসের মেয়াদ ২০ বছর ও সাধারণ সম্পাদকের প্রাক্টিসের মেয়াদ ১৫ বছর করলেও অবশিষ্ট পদে নির্বাচনের জন্য বয়সসীমা তুলে দেন। অ্যাড. নুরুল আমিন বলেন, বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. তোজাম্মেল হোসেন তোজামের নেতৃত্বাধীন কমিটির আট সদস্য গত ১৬ জানুয়ারি মাসে এক নোটিশে আগামি ২০ ফ্রেব্রæয়ারি আইনজীবী সমিতির বার্ষিক নির্বাচনের তারিখ উল্লেখ করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশনারের নাম ঘোষণা করে। সভাপতিকে বাদ দিয়েই সভা ডেকে এ তপশীল ঘোষণা অবৈধ ঘোষণা করে পাঁচজন নির্বাচন কমিশনারকে দায়িত্ব পালন না করার জন্য পৃথক পৃথকভাবে চিঠি দেন অ্যাড. আব্দুল মজিদ (২)। পরবর্তীতে তিনি ১৪ মার্চ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশনারের নাম ঘোষণা করেন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে বিরোধ তীব্র আকার ধারণ করার একপর্যায়ে সমিতির কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে দু’ শতাধিক আইনজীবী গণসাক্ষর করে তলবী সভা আহবানের জন্য গত ২৫ জানুয়ারি সাধারণ সম্পাদকের কাছে জমা দেন। সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. তোজাম্মেল হোসেন তোজাম তলবী সভা সম্পর্কিত আইনজীবীদের গণস¦াক্ষর ৩১ জানুয়ারি সভাপতি অ্যাড. আব্দুল মজিদের (২) কাছে জমা দেন। একই দিনে ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির আটজন সদস্য তোজামের নেতৃত্ব মেনে নিয়ে পদত্যাগ পত্র জমা দেন। সভাপতি ৫ ফেব্রæয়ারি তলবী সভা আহবান করেন। ওইদিন সভা ডেকে সভাপতি তলবী সভা গঠণতন্ত্র বিরোধী বলে তা (প্রসপণ্ড) বাতিল ঘোষণা করেন। যদিও কমিটিতে সংখ্যাগরিষ্ট হওয়া গ্রæপটি তলবী সভা বাতিলের জন্য বহিরাগত সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ভাড়া করে আদালত চত্বরে মজুদ রাখে বলে অভিযোগ ওঠে। ৮ ফেব্রæয়ারি ২০ জন জ্যেষ্ট আইনজীবীদের নিয়ে এক বিশেষ আলোচনা সভায় নতুন করে নির্বাচন তপশীল ঘোষণার জন্য অ্যাড. আব্দুর রউফকে (১) প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পদত্যাগকারি আট সদস্যের পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করা হয়। পরবর্তীতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অপর চার সহযোগি নির্বাচন কমিশনারের নাম উল্লেখ করে আগামি ১৬ মার্চ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে দেন। তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারি সভাপতির প্রাক্টিসের মেয়াদ ২০, সাধারণ সম্পাদকের ১৫ , সাধারণ সদস্যদের তিন বছর ও বাকি ছয়টি পদের জন্য ১০ বছর করে বয়স নির্ধারণ করে দেন। সে অনুযায়ি গত ২৩ ফেব্রæয়ারি প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র কেনেন। মনোনয়ন জমা ও যাঁচাই বাছাই এর জন্য ২৬ ফেব্রæয়ারি দিন নির্ধারণ করা হয়। ২৮ ফেব্রæয়ারি ছিল আপিল করার দিন। তবে সাধারণ সম্পাদক ছাড়াই সভাপতির স¦াক্ষরে নির্বাচন সংক্রান্ত নোটিশ দেওয়া হয়। মনোয়নপত্র যাঁচাই বাছাই এর সময় যুগ্ম সাধারণ সম্পাক অ্যাড. আকবর আলীর প্রাক্টিসের মেয়াদ ১০ বছর ও সদস্য পদে অ্যাড. রফিকুল ইসলামের প্রাক্টিসের মেয়াদ তিন বছর পূর্ণ না হওয়ায় তাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়। অ্যাড. নুরুল আমিন জানান, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থীদের প্রাক্টিসের মেয়াদ নতুন ও পুরাতন গঠণতন্ত্রে নির্ধারিত থাকলেও পুরাতন ও নতুন গঠণতন্ত্র অনুযায়ি ১২ ফেব্রæয়ারির ২০ জন জ্যেষ্ট আইনজীবীর আলোচনা সভার রেজুলেশনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রাক্টিসের মেয়াদ নির্ধারণ করা হলেও অন্য কোন পদে তা নির্ধারণ করা হয়নি। তা’ ছাড়া ১৬ মার্চের নির্বাচন সংক্রান্ত কমিটির সিদ্ধান্তে সভাপতির স¦াক্ষর থাকলেও সাধারণ সম্পাদকের সাক্ষর নেই। যা’ গঠণতন্ত্র বিরোধী। এ ছাড়া ১২ ফেব্রæয়ারির সিদ্ধান্ত না মেনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাড. আব্দুর রউফ ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির প্রতিটি পদের নির্বাচনে নিয়মবহির্ভুতভাবে প্রাক্টিসের বয়সসীমা বেঁধে দিয়েছেন। ফলে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাড. আকবর আলী ও সদস্য পদে অ্যাড. রফিকুল ইসলামের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। যা’ সাধারণ আইনজীবীদের জন্য অশনি সংকেত।
অ্যাড. নুরুল আমিন আরো বলেন, জ্যেষ্ট আইনজীবীদের হঠকারি সিদ্ধান্তের হাত থেকে সাধারণ আইনজীবীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও জেলা আইনজীবী সমিতির বর্তমান সভাপতি অ্যাড. আব্দুল মজিদের একক সাক্ষরে নির্বাচন কমিশন ঘোষণার বিরুদ্ধে তিনি মঙ্গলবার সদর সহকারি জজ আদালতে মামলা করেছেন। মামলায় জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. আব্দুল মজিদ(২), প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাড. আব্দুর রউফ (১), সহকারি কমিশনার অ্যাডঃ শ্রী তারক কুমার মিত্র, অ্যাডঃ মোঃ জহুরুল হক, অ্যাডঃ আনিসুর কাদির ময়না ও অ্যাডঃ লাকী ইয়াছমিনকে বিবাদী করা হয়েছে। মামলায় ( ৩৯/১৭) আগামি ১৬ মার্চের নির্বাচন বাতিল করার দাবি জানানো হয়েছে। বিচাররক এমএ সাঈদ বুধবার শুনানী শেষে আগামি পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য নোটিশ জারির নির্দেশ দিয়েছেন।#
এস.কে কামরুল হাসান
সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি।
০১৭২৯৫৭৭৪১৬
তাং ০২.০৩.১৭
No comments:
Post a Comment